বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: লকেট চট্টোপাধ্যায় ও তপন দাশগুপ্তের মধ্যে সঙ্ঘাত এবার অন্যমাত্রা নিল। এর আগে দলীয় কর্মিসভায় তপনবাবু গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে কর্মীদের সতর্ক করার পাশাপাশি বিজেপিকেও হুমকি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সেই হুমকির জবাব লকেট ফিরিয়ে দিলেন হুঁশিয়ারি দিয়ে। জানিয়ে দিলেন, তাঁরা তৃণমূলকে মারবেন না। জনগণই মারবে। ফলে বাংলার রাজনীতিতে এবার লকেট–তপন বিবাদ নতুন বিতর্ক তৈরি করবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
যদিও দলের গোষ্ঠীকোন্দলের ইঙ্গিত ছিল রাজ্যের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্তের কথায়। সোমবার সপ্তগ্রামে কর্মিসভায় বেশ ক্ষোভের সঙ্গেই তপন দাশগুপ্ত বলেছিলেন, ‘কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন, তিনি নাকি মস্তান। আমি তাঁকে বলছি, আমি তপন দাশগুপ্ত। আমিই সবচেয়ে বড় মস্তান। তুমি কী মস্তানি করবে, একুশের ভোটের পর দু’দিক দিয়ে পেটানো হবে।’ আসলে দলের অভ্যন্তরে একটি গোষ্ঠী তাঁকে হারানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে সন্দেহ তপনের। সে কথা প্রকাশ্যে বলেওছিলেন। তবে বিতর্ক চাপা দিতে দু’দিক দিয়ে পেটানোর অর্থ ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘একুশের ভোটে জেতার পর একদিকে সিপিএম আর বিজেপিকে পেটানো হবে, আর অন্যদিকে, দলের মধ্যে থেকেও যাঁরা ষড়যন্ত্র করে চলেছেন, তাঁদেরও পেটানো হবে।’
এদিন মন্ত্রীর সেই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এদিন রীতিমতো চাঁছাছোলা ভাষায় তিনি বলেন, ‘একুশে ভোটের পর তৃণমূলকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ, সরকারটাই উল্টে যাবে। তার পর তারা আর পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। কেন না, জনগণ তাদের ছেড়ে দেবে না। দশ বছর ধরে যে সব অন্যায় করে গিয়েছেন তৃণমূলের লোকজন, তার জবাব দিতে জনগণই চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরে তাঁদের মারবে।’ এদিন লকেট মুখ খোলার অবশ্য আরও একটি কারণও আছে। কারণ হুগলির রাজনীতিতে লকেট–তপন বিবাদ সকলের জানা। একবার লকেট চট্টোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তপন দাশগুপ্ত বলেছিলেন, ‘করোনার সময় আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে রাস্তায় নেমেছেন। টানা ১৯২ দিন ধরে তিনি রাস্তায় রয়েছেন। আমিও আমার বিধানসভার রাস্তায় মানুষের পাশে রয়েছি। কিন্তু লকেট সুন্দরী কোথায়?’ উল্লেখ্য, মন্ত্রীর ভাষা শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় লকেট সেই প্রশ্নের জবাব তখন দেননি।
কিন্তু মঙ্গলবার মুখ খুলে তপনবাবুর সেই প্রশ্নের জবাবও দিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের কাছে মহিলাদের কোনও সম্মান নেই। মহিলাদের কী ভাবে সম্মান দিতে হয়, তা তাঁরা জানেন না। আর এ কথা শুধু এই হুগলি জেলাই নয়, গোটা বাংলা, এমনকী দুনিয়াশুদ্ধ লোক জানেন।’ শুধু তাই নয়, তিনি এ কথাও বলেন, ‘গোটা হুগলি জেলাতেই তৃণমূলের ভিতরেই আগুন লেগে গিয়েছে। এখন তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। প্রতিদিনই তাদের এই গোষ্ঠী সঙ্ঘর্ষের খবর প্রকাশ্যে চলে আসছে। সেদিক থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতেই এখন বিজেপিকে ভয় দেখানোর রাস্তা ধরেছে।’